জীবন যুদ্ধে একজন হার না মানা নারী ”শেফা জাহান”

 জীবন যুদ্ধে একজন হার না মানা নারী ”শেফা জাহান”

পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জের মেয়ে শেফা জাহান । একজন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। পরিবারের পাঁচ বোন ও দুই ভাই এর মধ্যে তিনি সবার ছোট।তাই তিনি পরিবারের মধ্যে সব চেয়ে বেশ আদরের ও বটে। ছোট বেলা থেকেই তিনি বেশ চঞ্চল ও‌ বেশ বুদ্ধিমতি। এবং সব সময় চেষ্টা করেন নিজে কিছু করার সেই স্বপ্নের অনুপ্রেরণা ছিল বাবা এবং মা।

কিন্তু হঠাৎ শেফা জাহান এর পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। হঠাৎ একদিন তার বাবা স্টোক করে মৃত্যু বরণ করেন। তিনি তখন সবে মাত্র এস এস সি পরিক্ষার্থী।সেখান থেকেই বাস্তবতা কিছু শিখতে থাকেন।কিন্তু তখন মা ছিলেন তাই অনেক কিছুই বুঝতে দেয়নি।বাবার কষ্ট কে সবসময় ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করতেন তাঁর মা।

তখন থেকে শুরু তার মায়ের অনুপ্রেরণায় এস এস সি শেষ করে এইচএসসি ভর্তি হোন।সব চেয়ে তার পড়াশোনায় অবদান তার মায়ের এবং প্রিয় শিক্ষকদের।

শুরু হলো নতুন জীবন, তার মাকে নিয়ে বেশ ভালোই চলছিলো।বাবা বিহীন সংসার মাঝে মাঝে পাড়া প্রতিবেশি, আত্মীয় স্বজন সহ নানান জনের নানান কথা শুনতে হতো তাদের। তিনি তার মাকে প্রায় সময় দেখতেন গোপনে কান্না করতে। তার পর তার পর ও তার মা তাকে কখনো বুঝতে দেয়নি। কোন কিছু অপূর্ণতা রাখেনি। তিনি সব সময় শেফা কে একটা কথা বলতেন, পড়াশোনা শেষ করতেই হবে,সততা দিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

কিন্তু নিয়তির চরম খেলা সেখানে কারো হাত থাকেনা,সাল ২০০৯ জানুয়ারীর ২ তারিখ এইচ এস সি ফর্ম ফিলাপ করতে যাবেন, ঠিক সময় নেমে আসলো সেই কালো রাত হঠাৎ শব্দ পান তার মা রাতে উঠতে গিয়ে পরে গেলেন, তার বাবার মতো মা ও স্টোক করে মৃত্যু বরণ করেন।মা বিহীন অন্ধকার জীবনের শুরু।তার পর তিনি এইচএসসি সম্পন্ন করেন। কিন্তু তার কাছে মনে হয়েছে তখন পুরো পৃথিবীর কালো অন্ধকারে ডুবে গেলো,তখন সব আপনজকে চিনতে পারেন। তখন তিনি ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু সে সময় কিছু মানুষ পাশে ছিলেন,যাদের মধ্যে তার কিছু বান্ধবী এবং তাদের পরিবার।

বিয়ের ইচ্ছে না থাকা সত্বেও তখন বিয়ে করতে হয় শেফা জাহানের শুধু মাথা গুজার আশ্রয়ের জন্য। পরিবার যে অনেক দরিদ্র তা নয়,শুধু মানুষ গুলো ছিলো স্বার্থপর, পরিবারের সবাই মনে করতেন তিনি তাদের বোঝা ছিলেন এটাই তাদের বড় কারন।

যাই হোক বিয়ে করেন তিনি, এবং তিনি মনে করেন তার বাবা মায়ের দোয়া তে বেশ ভালো একজন স্বামী পেয়েছেন,যিনি সব সময় সব কিছুতে তাকে সাপোর্ট করেন, এবং তার স্বামী তাকে এম বি এ সম্পন্ন করান।

তার মা বাবার খুব স্বপ্ন ছিলো তিনি যেনো ভালো কিছু করেন। এমবি এ শেষ করে চাকুরীর পাশাপাশি সবসময় ভাবতেন নিজে কিছু করতে হবে, কিন্তু ব্যবসা করা ছোট বেলা থেকে একটা স্বপ্ন ছিলো,যেহেতু তিনি কমার্স এর ছাত্রী ছিলেন,সে হিসেবে ব্যবসাটা বেশ ভালো বুঝেন।

তাই স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি বিজনেস সম্পর্কে আরো ভালো জানতে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন। তিনি একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন সেখানে তার পাশাপাশি তার কিছু দূর আত্মীয় ভাবি ও প্রিয় বান্ধবী আফসানার অনুপ্রেরণায় অনলাইন ব্যবসা শুরু করে দেন। এবং তিনি ঠিক করেন বাবা মায়ের নামের সাথে মিল রেখে তার প্রতিষ্ঠানের নাম রাখবেন তাই নাম দিয়েছেন “Halimaz’s dress collection ” ।

তিনি প্রথমে কিছু ড্রেস এবং শাড়ি নিয়ে আসেন। তখন তাকে তার এক বন্ধু নারী উদ্যোক্তা সংগঠনের গ্রুপে এড করেন যাকে উইও নামে সবাই চিনে। তখন থেকেই তার পথ চলা। কিন্তু তখন তিনি উই এর সব কিছু বুঝতেন, তারপর তিনি বিভিন্ন জনের পোস্ট দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হোন এবং আস্তে আস্তে ভাল লাগা কাজ করে।বিশেষ করে রোয়েনা রহমান এর পোস্ট গুলো বেশ ভালো ভাবে তিনি পড়তেন।তার পোস্ট পড়ে তিনি অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হতেন।

বর্তমানে তিনি সূতি ড্রেস ও অন্যন্য শাড়ি পাশাপাশি দেশীয় ঐতিহ্য জামদানি কাজ করছেন,অনেক ইচ্ছে আছে তার দেশীয় ঐতিহ্য বিভিন্ন পন্য নিয়ে সততার সাথে এগিয়ে যাওয়া। এবং চেষ্টা করছেন সুলভ মূল্যে সবার সাধ্যের মধ্যে দাম রেখে পন্য বিক্রি করা। এবং তার স্বপ্ন পুরো বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে তার পন্য ছড়িয়ে দেওয়া।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন,জেলা প্রতিনিধি রোয়েনা রহমান।

RedLive

Related post

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।